সদ্য নিষিদ্ধ হওয়ার পর আরও একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম থাকার তথ্য সামনে এসেছে। 'তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ নামের এই জঙ্গি সংগঠনটি আল-জিহাদী নামেও পরিচিত। এই নামেই নতুন জঙ্গি সংগঠনটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। আগামী বছর নতুন জঙ্গি সংগঠনটির দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন জঙ্গি সংগঠনটির একজন শীর্ষ নেতাসহ তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্যই জানাল জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা পুলিশের বিশেষায়িত শাখা এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
শনিবার দুপুরে ঢাকার বারিধারায় এটিইউয়ের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস মোহা. আলীম মাহমুদ। তিনি আরও জানান, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের সূত্রধরে গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানে বাগেরহাট থেকে মো. জুয়েল মোলস্না (২৯), জয়পুরহাট থেকে মো. রাহুল হোসেন (২১) ও ঢাকার ভাসানটেক থেকে গাজীউল ইসলামকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জুয়েল নতুন জঙ্গি সংগঠনটির
প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বাকি দুইজন সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সংগঠনটি প্রায় ৩ মাস ধরে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী বছর দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। গ্রেপ্তার তিনজনই আগাগোড়াই জঙ্গিবাদে জড়িত। তারা আগে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। তারা নতুন করে নতুন জঙ্গি সংগঠনের নামে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
ডিআইজি মোহা. আলীম মাহমুদ বলছেন, গ্রেপ্তাররা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও এবং পোস্ট দিয়েছেন। যেসব ভিডিও এবং পোস্ট দেখে যাতে নতুন করে কেউ সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট হন। মূলত নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নিয়েছেন। নতুন জঙ্গি সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নেতা জুয়েল। গ্রেপ্তারদের কাছে নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৮টি ব্যানার পাওয়া গেছে। তারা সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি দলের ফান্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সংগ্রহ করা টাকা দিয়ে মারাত্মক অস্ত্র কেনা ও শক্তিশালী বোমা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করার পরিকল্পনা ছিল। প্রয়োজনীয় সংখ্যক অস্ত্র কিনে ও বোমা তৈরি করে মজুত করার পরেই তাদের বড় ধরনের নাশকতা চালানোর কথা ছিল। বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে তারা নিজেদের শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানান দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, দলনেতা জুয়েল মূলত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুলস্নাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি মাওলানা জসীমুদ্দিন রাহমানীর অনুসারী। জসীমুদ্দীন রাহমানী বর্তমানে কারাবন্দি। প্রায় ৯ মাস কারাবন্দি ছিলেন জুয়েল। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পরেই তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠনটি সৃষ্টি করেন। নতুন জঙ্গি সংগঠনটি পুরোপুরি গঠিত হলে এবং শক্তিমত্তা অর্জন করতে সমর্থ হলে কারাবন্দি জসীমুদ্দীন রাহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল জুয়েলের। নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৯০ জনের মত। সংগঠনটির পক্ষে অর্থ সংগ্রহ করছিলেন রাহুল। তিনি বোমা তৈরি ও মজুত করার দায়িত্বেও ছিলেন।
ডিআইজি মোহা. আলীম মাহমুদ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে নতুন জঙ্গি সংগঠনের কোনো পরিকল্পনার ছিল কি না সে সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কিছুই জানা যায়নি। এ ব্যাপারে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নতুন জঙ্গি সংগঠনটির হামলার টার্গেট সম্পর্কেও সুস্পষ্টভাবে কিছুই জানা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশনস) ছানোয়ার হোসেন জানান, জুয়েল মোলস্না নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুলস্নাহ বাংলা টিমের জঙ্গি হিসেবের্ যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কারাগারে ছিলেন ৯ মাস। কারাগারে বসেই জুয়েল নতুন জঙ্গি সংগঠন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক গঠন করেন নতুন জঙ্গি সংগঠন। জুয়েল সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। পেশায় বেকারি কর্মী ছিলেন। জুয়েলের গ্রেপ্তারকৃত দুই সহযোগী হিজবুত তাওহীদ নামের একটি সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে। হিজবুত তাওহীদ কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়।
তিনি আরও জানান, রাহুল একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। তবে প্রযুক্তি বিষয়ে তিনি ভালো জ্ঞান রাখেন। তিনি হামলার জন্য বোমার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। বোমা হামলার অর্থ জোগাতে নিজের জমি বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের কাজও করতেন রাহুল। গ্রেপ্তাররা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নন। তারা উগ্রবাদে বিশ্বাসী। দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছিলেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া' নামের জঙ্গি সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে। এর আগে বিভিন্ন সময় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা অব বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ পরবর্তীতে নাম সংক্ষিপ্ত করে হরকাতুল জিহাদ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর, আনসারুলস্নাহ বাংলা টিম, আনসার আল ইসলাম ও আলস্নাহর দল নামের ৮টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সরকার।